সাদা চিনি ? দেখতে কতই না সুন্দর আর ঝরঝারে ।
দেখতে সুন্দর আর ঝরঝারে সাদা চিনির অপকারিতা না জানার কারণে আমি, আপনি, আমরা সবাই এই সাদা চিনি খেয়েই
হার্ট এট্যাক, ডায়াবেটিস সহ লিভার নষ্ট করার মত রোগের দিকে আমাদের শরীরকে বিনা দ্বিধায় ঠেলে দিচ্ছি। দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত কিংবা দেশে উৎপাদিত যে রকমই হোক না কেন পরিশোধিত সাদা চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । কিন্তু দেশে উৎপাদিত লাল চিনির অনেক উপকারিতা ও গুণাগুণ রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে সাদা চিনির পরিবর্তে আমাদের দেশে উৎপাদিত লাল চিনি খাওয়া উচিত।
বাংলাদেশ খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত কিংবা দেশে উৎপাদিত পরিশোধিত সাদা চিনি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লাল চিনিকে কারখানায় পরিশোধিত করে সাদা করার জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয় আর সেই কারণেই পরিশোধনের সময় প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন, এনজাইম সহ অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়।
পরিশোধনের আগে এবং পরে লাল চিনি ও সাদা চিনির মধ্যে পুষ্টি উপাদানের যে পার্থক্য থাকে তা হলঃ-
উপাদানের নাম ও পরিমাণ ( মাত্রা ) | আখ থেকে উৎপাদিত লাল চিনিতে | পরিশোধিত সাদা চিনিতে |
ক্যালসিয়াম | ১৬০.৩২ ভাগ । | ১.৫৬ থেকে ২.৬৫ ভাগ। |
পটাশিয়াম | ১৪২.৯ ভাগ | 0.৩২ থেকে 0.৩৫ ভাগ। |
ফসফরাস | ২.৫ থেকে ১০.৭৯ ভাগ | ২.৩৫ ভাগ। |
আয়রন | 0.৪২ থেকে ৬ ভাগ | 0.৪৭ ভাগ |
ম্যাগনেশিয়াম | ১৫ থেকে ৩.৮৬ ভাগ | 0.৬৬ থেকে ১.২১ ভাগ। |
সোডিয়াম | 0.৬ ভাগ | 0.২ ভাগ |
লাল চিনি সরাসরি আখ থেকে উৎপাদিত অপরিশোধিত চিনি।
উৎপাদনের পর অপরিশোধিত থাকে বলে লাল চিনিতে আখের সব উপাদান ম্যাঙ্গানিজ,ম্যাগনেসিয়াম,শর্করা,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,লৌহ, অ্যামাইনো অ্যাসিড,জিঙ্ক,থায়ামিন,রিবোফ্লবিন,ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়ে যায়। আর ঠিক এজন্য সাদা চিনির চেয়ে লাল চিনির উপকারীতা বেশি।
লাল চিনির কিছু উপকারিতা ও গুণাগুণঃ
১) আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত করে। আর লাল চিনিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় লাল চিনি খেলে হাড় শক্ত হয়।
২) লাল চিনিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়তা করে ।
৩) লিভারকে সুস্থ রাখ্তে সহায়তা করে।
৪) যাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য আছে তাদের জন্য সুখবর হল
লাল চিনি কোষ্ঠ কাঠিন্যতা দূর করে।
৫) শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের অভাবে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধা ফেলে স্ট্রোক হয় । লাল চিনি শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের অভাব পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে,যার ফলে স্ট্রোক প্রতিরোধ হয়।
৬) শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
কিন্তু লাল চিনি রিফাইন বা পরিশোধন করতে গিয়ে ভিটামিন,মিনারেল,প্রোটিন,এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায় কারণ চিনি পরিশোধন করতে ব্যবহার করা হয় সালফার এবং হাড়ের গুঁড়ো। সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে সম্পর্কে ডঃউইলিয়াম কোডা মার্টিন এক গবেষণাপত্র বের করেছিলেন। ডঃউইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণাপত্রে বলেন-
“চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।”
ডঃউইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণা লব্ধ ফলাফল দিয়ে প্রমাণ করেন- রিফাইন করা চিনি আমাদের দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর । চলুন ,
সাদা চিনির আরো কিছু অপকারিতা জেনে নিইঃ
১) সাদা চিনি পরিশোধনের সময় চিনির মিনারেল বা প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান দূর হয়ে যায় বলে এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে আনে যার কারণে মস্তিষ্কে নিউরন কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা গিয়ে স্ট্রোকের মত ঘটনা ঘটে।
২) পরিশোধনের সময় ভিটামিন দূর হয়ে যায় বলে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান থাকে না।
৩) সাদা চিনিতে অতিমাত্রায় ফ্রুক্টোজ থাকে। আমাদের শরীরে লিভারই ফ্রুক্টোজ হজম করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভার হজম করতে পারেনা। যার কারণে ফ্রুক্টোজ লিভারে চর্বি আকারে জমা হতে থাকে। এর ফলে লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
৪) চিনি পরিশোধনের সময় ব্যবহার করা সালফার আর হাড়ের গুড়া যা কিডনি নষ্ট করে ফেলে।
সাদা চিনির এত অপকারিতা থাকার কারণেই মূলত সাদা চিনিকে বিশেষজ্ঞরা সাদা বিষ বা white poison বলে।
সাদা কিংবা লাল যে চিনিই হোক না কেন অতিরিক্ত চিনি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তারপরও চিনি যদি খেতে হয় তাহলে আপনারা নিজেদের শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য সাদা চিনি খাওয়া বাদ দিয়ে লাল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলন।