শিশুর সুস্থতার জন্য মায়ের বুকের দুধ অপরিহার্য। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, স্তন্যদানকারী মায়েদের দুধের উৎপাদন কম হতে পারে।
চিন্তা নেই! কিছু সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে বুকের দুধ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এই আর্টিকেলে, আমরা পাঁচটি অসাধারণ ঘরোয়া উপায় শেয়ার করবো যা আপনাকে স্তন্যদান সফলভাবে চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
১. শিশুর নিয়মিত স্তন্যপান:
স্তন্যপান বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত শিশুকে স্তন্যদান করানো। শিশু যত বেশি স্তন্যপান করবে, দুধের উৎপাদন তত বেশি হবে। দিনে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বার স্তন্যদান করানোর চেষ্টা করুন।
২.পুষ্টিকর খাদ্য:
স্তন্যদানকারী মায়েদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া উচিত। ফল, সবজি, শস্য, মাছ, মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য খান। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
৩.গ্যালাক্টাগোগ খাবার:
কিছু খাবার স্তন্যদু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এগুলি গ্যালাক্টাগোগ নামে পরিচিত। মেথি, শশা, জিরা, মৌরি, কালোজিরা এবং ফেনুগ্রিক গ্যালাক্টাগোগ খাবারের উদাহরণ।
৪.বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ:
স্তন্যদানকারী মায়েদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মানসিক চাপ স্তন্যদু উৎপাদন কমাতে পারে। তাই চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
৫.স্তন্য ম্যাসাজ:
স্তন্য ম্যাসাজ স্তন্যদু প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। দিনে দুইবার ৫ থেকে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
কি খাবার খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে?
মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু কিছু মায়ের ক্ষেত্রে বুকের দুধের পরিমাণ পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।
এই সমস্যা সমাধানে অনেকেই ঘরোয়া উপায়ের সাহায্য নেন।
এখন জেনে নিন বুকের দুধ বৃদ্ধির ৫টি অসাধারণ খাবার সম্পর্কে আলোচনা করবো যা বাজারে সহজলভ্য এবং খুব কম খরচে পাওয়া যায়।
১. মেথি:
- মেথি বীজ দুধ বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
- ১ টেবিল চামচ মেথি বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে পানি ছেঁকে বীজগুলো চিবিয়ে খান এবং পানি পান করুন।
- বিকল্পভাবে, মেথি দিয়ে তরকারি রান্না করে খেতে পারেন।
২. শশা:
- শশা দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
- প্রতিদিন 2-3 টুকরো শশা খান।
- শশা দিয়ে তরকারি, স্যালাড, জুস তৈরি করেও খেতে পারেন।
৩. তিল:
- তিল দুধ বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী।
- 1 টেবিল চামচ তিল ভেজে গুঁড়ো করে নিন।
- গুঁড়ো দুধের সাথে মিশিয়ে খান।
- বিকল্পভাবে, তিলের লড্ডু তৈরি করে খেতে পারেন।
৪. জিরা:
- জিরা দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি উন্নত করে।
- 1 চা চামচ জিরা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন।
- এই পানি দিনে 2-3 বার পান করুন।
- বিকল্পভাবে, জিরা গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৫. মৌরি:
- মৌরি দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তি দেয়।
- 1 টেবিল চামচ মৌরি 1 গ্লাস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খান।
- বিকল্পভাবে, মৌরি রুটির সাথে খেতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে বুকের দুধ ঘন করার উপায়?
এই ৫ টি অসাধারণ উপায় অনুসরণ করে আপনিও পারবেন আপনার শিশুর জন্য পর্যাপ্ত বুকের দুধ তৈরি করতে:
১. বারবার স্তন্যপান:
- শিশুকে যতবার চায় ততবার স্তন্যপান করানোর সুযোগ করে দিন।
- বারবার স্তন্যপান করানো দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- শিশু যখন দুধ খাওয়া শেষ করে, তখনো কিছুক্ষণ স্তন্যপান করিয়ে রাখুন।
- এতে স্তনের দুধের নালীগুলো পুরোপুরি খালি হবে এবং দুধের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
২. সঠিক স্তন্যপান পদ্ধতি:
- শিশুকে সঠিকভাবে স্তন্যপান করানো দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- শিশুর মুখ যেন পুরোপুরি বুকের আওতায় থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
- শিশুর ঠোঁট এবং চোয়াল বুকের সাথে লেগে থাকা উচিত।
- শিশু যেন দুধ টানার সময় গিলে ফেলার শব্দ শোনা যায়।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার:
- সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, ওটমিল, মৌরি, ইত্যাদি খাবার খান।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- দিনের বেলায়ও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
৫. মানসিক চাপ কমাতে:
- মানসিক চাপ দুধের উৎপাদন কমাতে পারে।
- ধ্যান, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ইত্যাদি করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে পারেন।
- পরিবার ও বন্ধুদের সাহায্য নিন।