কিডনি সমস্যা বুঝার সহজ উপায় | কিডনি রোগের লক্ষন | কিডনি সমস্যা ও সমাধান |

কিডনি হলো আমাদের শরীরের সবচেয়ে কার্যকরী এবং জটিল একটি  উপাদান। যদি কোন কারণে কিডনি তার কাজ করা বন্ধ করে দেয়,  তাহলে শরীরে নানা রকম রোগ থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।  

তাই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে যত্ন নেওয়া আমাদের খুব বেশি দরকার। এটি যে কাজ করে থাকে তার মধ্যে প্রধান একটি কাজ হলো শরীরের রক্ত পরিশোধন করে থাকে। অর্থাৎ ফিল্টারিংয়ের কাজ করে থাকে।  

মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে। যেগুলো শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে ফেলে।

কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক রোগ। বাংলাদেশ কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করে।

অশেষ ভাগ্য যে দুটি কিডনি মানুষের আছে, না হলে এই মৃত্যুর হার আরও দ্বিগুন হয়ে যেত। কারণ একটি কিডনি কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেলে অন্য একটি কিডনি নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে  কিডনি ট্রান্সফার করা যায়।

তাহলে বন্ধুরা আমাদের কি এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যত্ন নেওয়া উচিত নয়?

অবশ্যই উচিত।  

কারণ যখন কোন কিডনি নষ্ট হয়ে যায় তখন এর লক্ষণ খুব কম দেখা যায়। যখন এর ফাইনালে পৌঁছায় তখন আমরা শুধু বুঝতে পারে কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। খুব কম মানুষই বুঝতে পারে যখন তাদের একটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষই তখন বুঝতে পারে যখন তাদের দুইটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। যখন সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।

তাই বন্ধুরা, আমাদের উচিত যাতে আমাদের কিডনি সুস্থ থাকে এবং তার কার্য্যকারিতা ভালোমতো করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা।

এখন আমরা যে বিষয়ে কথা বলব সেটি হলো কিভাবে আমরা আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে সুস্থ রাখতে পারি

তাহলে বন্ধুরা চলুন জেনে নিই

প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। কেন আমরা পানি খাব এবং কিডনি পরিষ্কার এর সাথে পানির কি সম্পর্ক আমি সেটা এখন আপনাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিব। বন্ধুরা আমাদের কিডনিতে একটি ছাকনি থাকে, এই ছাকনি দিয়ে আমরা আমাদের দূষিত পদার্থ গুলো শরীর থেকে মূত্র আকারে বের করে দিয়ে আমাদের সুস্থ রাখে। 

বন্ধুরা আমাদের রক্তে এমন অনেকগুলো পদার্থ থাকে যেসব আমরা খাবার এর মধ্য দিয়ে খায় অর্থাৎ দূষিত খাবার যখন খায় তখন এই ধরনের পদার্থ গুলো আমাদের পেটে চলে যায়। যে সকল পদার্থগুলো আকার বড় হয় এগুলো ছাকনি দিয়ে বের হতে পারে না এবং ছাকনির উপরে আটকে থাকে, যা বের হয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারেনা। এই সকল পদার্থগুলো যদি ছাকনির ওপরে অনেকদিন থেকে যায় তাহলে কিডনিতে পরবর্তীতে পাথর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। 

কিন্তু আমরা যদি প্রতিদিন পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিই তাহলে পানির ধাক্কায় কিডনিতে ছাকনির উপরে যে দূষিত পদার্থ থাকে সেগুলো মূত্রের সাথে বের হয়ে যেতে পারে।  তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিনই পানি খাওয়া উচিত।

রক্তের চাপ কে স্বাভাবিক রাখতে হবে। রক্তচাপ ১২০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০অথবা কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরি।

 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

ওষুধ খাবার ক্ষেত্রে সাবধানতা। কমবেশি ওষুধ খাওয়া প্রায় কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধ গুলো কিডনির জন্য একেবারেই যায়না। নিয়ম না জেনে না বুঝে ওষুধ কিনে খাওয়া মানে অজান্তে কিডনির ক্ষতি করা। সব ধরনের ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ একান্ত জরুরি। প্রয়োজনের বেশি ওষুধ খাবেন না।  

মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।  তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করুন। আর কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে। অনেকেই বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংক খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন এবং তৃষ্ণা মেটাতে শুধুই পানি খান।

ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে, এবং এর ফলে কিডনি কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে ধূমপান ও মদ্যপানের ব্যক্তি এক পর্যায়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।

কিডনির পরীক্ষা করান। উচ্চরক্তচাপ,  ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন এবং পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত।