পায়খানা না হলে করণীয় ঘরোয়া উপায়

পায়খানা না হলে করণীয়

পায়খানা না হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকের জীবনে বিরক্তির কারণ হতে পারে। নিয়মিত মলত্যাগ না হলে, পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, অস্বস্তি এবং পেট খারাপ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ:

  • তিন দিন বা তার বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না হওয়া
  • শক্ত, শুষ্ক এবং ছোট মল
  • মলত্যাগের সময় অসুবিধা এবং ব্যথা
  • পেটে ফোলাভাব এবং অস্বস্তি
  • পেটে ব্যথা
  • মলত্যাগের পরও পেট পরিষ্কার না অনুভূত হওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ:

  • পানিশূন্যতা: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম প্রধান কারণ।
  • আঁশযুক্ত খাবারের অভাব: ফল, শাকসবজি এবং বাদামের মতো আঁশযুক্ত খাবার মলকে নরম করে এবং সহজে বের করে দেওয়ার সাহায্য করে।
  • অনিয়মিত জীবনধারা: অনিয়মিত খাওয়া, ঘুমানো এবং ব্যায়াম না করা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং ব্যথানাশক, কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
  • অন্যান্য কারণ: গর্ভাবস্থা, থাইরয়েড সমস্যা, এবং ডায়াবেটিসের মতো কিছু অবস্থা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া উপায়:

১. পানি পান: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

২. আঁশযুক্ত খাবার: খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার যোগ করা মলকে নরম করে এবং সহজে বের করে দেওয়ার সাহায্য করে।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৪. সঠিক বসার অভ্যাস: টয়লেটে বসার সময় পা স্টুলের উপর রেখে বসলে মলত্যাগ সহজ হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া উপায়

৫. তেল ব্যবহার: নারকেল তেল, জলপাই তেল, বা তিলের তেল খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৬. গরম পানি পান: সকালে খালি পেটে গরম পানি পান করা অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৭. ইসবগুলের ভুসি: ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেলে মলকে নরম করে এবং সহজে বের করে দেওয়ার সাহায্য করে।

৮. ত্রিফলা: ত্রিফলা একটি ভেষজ ঔষধ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

পায়খানা না হলে কি ঔষধ

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

  • ল্যাক্সেটিভ: ল্যাক্সেটিভ মলকে নরম করে এবং সহজে বের করে দেওয়ার সাহায্য করে। ল্যাক্সেটিভের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যেমন:
    • স্টিমুল্যান্ট ল্যাক্সেটিভ: এই ঔষধগুলি অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে।
    • অস্মোটিক ল্যাক্সেটিভ: এই ঔষধগুলি মলে পানি টেনে নিয়ে মলকে নরম করে।
    • লুব্রিকেন্ট ল্যাক্সেটিভ: এই ঔষধগুলি মলকে পিচ্ছিল করে এবং সহজে বের করে দেওয়ার সাহায্য করে।
  • বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভ: বাল্ক-ফর্মিং ল্যাক্সেটিভ মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের নড়াচড়া উদ্দীপিত করে।
পায়খানা না হলে কি ঔষধ

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে:

  • কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয়: কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ: কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • সঠিক ঔষধ নির্বাচন: কোষ্ঠকাঠিন্যের বিভিন্ন ধরণের ঔষধ রয়েছে। একজন চিকিৎসক আপনার জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে সাহায্য করতে পারেন।
  • সঠিক ডোজ: ঔষধের সঠিক ডোজ ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম

পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম হলো এমন কিছু শারীরিক কার্যকলাপ যা অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে এবং মলত্যাগ সহজ করে। নিয়মিত ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কিছু কার্যকর ব্যায়াম:

১. হাঁটা:

হাঁটা একটি সহজ এবং কার্যকর ব্যায়াম যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

২. দৌড়ানো:

দৌড়ানো হাঁটার চেয়ে বেশি কার্যকর, তবে এটি শুরু করার আগে আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত।

পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম

৩. সাঁতার কাটা:

সাঁতার কাটা একটি সম্পূর্ণ শারীরিক ব্যায়াম যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৪. যোগব্যায়াম:

কিছু যোগব্যায়াম, যেমন সূর্য নমস্কার, ত্রিকোণাসন, এবং পশ্চিমোত্তনাসন, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৫. পেটের ব্যায়াম:

পেটের ব্যায়াম, যেমন সিট-আপ এবং ক্রাঞ্চেস, অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন:

  • যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘস্থায়ী হয়
  • যদি পেটে তীব্র ব্যথা হয়
  • যদি মলত্যাগের সময় রক্ত বের হয়
  • যদি ওজন কমে যায়
  • যদি ক্ষুধামান্দ্য হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি বিরক্তিকর এবং জীবনের মানকে নষ্ট করতে পারে, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে সাবধান থাকবেন।