মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

মাম্পস হল একটি সংক্রামক রোগ যা লালাগ্রন্থিকে প্রদাহ করে। এই রোগটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে বড়দেরও হতে পারে। মাম্পসের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ে এর লক্ষণগুলি উপশম করা সম্ভব।

মাম্পস কেন হয়?

মাম্পস ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মাম্পস হয়। এই ভাইরাসটি হাঁচি, কাশি, বা সংক্রামিত ব্যক্তির লালার সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়।

সংক্রমণের পদ্ধতি:

  • হাঁচি-কাশির মাধ্যমে
  • সংক্রামিত ব্যক্তির লালার সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে
  • ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে
মাম্পস কেন হয়

কাদের ঝুঁকি বেশি:

  • যারা টিকা নেননি
  • যারা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন
  • যারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করে

মাম্পসের লক্ষণ কি?

জ্বর: মাম্পসের একটি সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর, যা 103°F (39.4°C) পর্যন্ত উঠতে পারে। জ্বর সাধারণত লোহিত রোগের 5-6 দিন পরে শুরু হয় এবং 7-10 দিন স্থায়ী হতে পারে।

মাথাব্যথা: মাম্পসের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল মাথাব্যথা, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। মাথাব্যথা সাধারণত জ্বরের সাথে শুরু হয় এবং কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

গলাব্যথা: মাম্পসের লক্ষণগুলির মধ্যে গলাব্যথাও অন্তর্ভুক্ত, যা গিলে ফেলার সময় ব্যথা হতে পারে। গলাব্যথা সাধারণত জ্বরের সাথে শুরু হয় এবং কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

কানের নিচে ব্যথা: কানের নিচে, লালাগ্রন্থিতে ব্যথা মাম্পসের একটি প্রধান লক্ষণ। ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

মাম্পসের লক্ষণ কি

লালাগ্রন্থির ফোলাভাব: মাম্পসের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হল লালাগ্রন্থির ফোলাভাব। ফোলাভাব সাধারণত কানের নিচে দেখা দেয় এবং কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।

খাওয়া ও গিলে ফেলতে অসুবিধা: লালাগ্রন্থির ফোলাভাবের কারণে খাওয়া ও গিলে ফেলতে অসুবিধা হতে পারে। এই সমস্যাটি কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

ক্লান্তি: মাম্পসের লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তিও অন্তর্ভুক্ত, যা তীব্র হতে পারে। ক্লান্তি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।

মাথাব্যথা: মাথাব্যথা মাম্পসের একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। মাথাব্যথা তীব্র হতে পারে এবং কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব মাম্পসের একটি অস্বাভাবিক লক্ষণ হতে পারে। বমি বমি ভাব কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

পেশী ব্যথা: পেশী ব্যথা মাম্পসের একটি অস্বাভাবিক লক্ষণ হতে পারে। পেশী ব্যথা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

মাম্পসের লক্ষণ

নোট: এই লক্ষণগুলি সবসময় একসাথে দেখা দেয় না। কিছু লোকের মধ্যে কেবল কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয়, আবার অন্যদের মধ্যে সবগুলি লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলির তীব্রতাও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

মাম্পসের ঘরোয়া চিকিৎসা

বিশ্রাম:

  • মাম্পসের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • বিশ্রাম শরীরকে সংক্রমণ থেকে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • স্কুল, কাজ, বা অন্যান্য কার্যকলাপ থেকে বিরতি নিন।
  • ঘুমোতে এবং বিশ্রাম নিতে যথেষ্ট সময় দিন।

পর্যাপ্ত তরল পান:

  • ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত তরল পান করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • পানি, রস, স্যুপ, এবং অন্যান্য তরল পান করুন।
  • ঠান্ডা পানীয় পান করা গলাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মাম্পসের ঘরোয়া চিকিৎসা

ঠান্ডা সেঁক:

  • ঠান্ডা সেঁক লালাগ্রন্থির ফোলাভাব এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • একটি পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে লালাগ্রন্থির উপর প্রয়োগ করুন।
  • 10-15 মিনিটের জন্য প্রতি কয়েক ঘন্টা অন্তর প্রয়োগ করুন।

লবণ জল দিয়ে গড়গড়া:

  • লবণ জল দিয়ে গড়গড়া করা গলাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন।
  • দিনে কয়েক বার গড়গড়া করুন।

ব্যথানাশক ওষুধ:

  • ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন ibuprofen বা acetaminophen, জ্বর এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • নির্দেশাবলী অনুযায়ী ওষুধ খান।
মাম্পসের ব্যথানাশক ওষুধ

নরম খাবার:

  • নরম খাবার খাওয়া গিলে ফেলতে সহজ করে তোলে।
  • স্যুপ, পিউরি, এবং অন্যান্য নরম খাবার খান।
  • ঝাল এবং টক খাবার এড়িয়ে চলুন

কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত

  • যদি আপনার জ্বর ১০৩°F (৩৯.৪°C) এর বেশি হয়।
  • যদি আপনার ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
  • যদি আপনার শ্বাসকষ্ট হয়।
  • যদি আপনার তীব্র পেট ব্যথা হয়।
  • যদি আপনার অন্ডকোষে ব্যথা বা ফোলাভাব হয় (পুরুষদের জন্য)।
  • যদি আপনার স্তনবৃন্তে ব্যথা বা ফোলাভাব হয় (নারীদের জন্য)।
মাম্পস হলে কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত

মাম্পস কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

টিকা:

  • মাম্পস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল টিকা নেওয়া।
  • এমএমআর (Measles, Mumps, and Rubella) টিকা মাম্পস প্রতিরোধে ৯৭% কার্যকর।
  • শিশুদের ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে এবং পরে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে এমএমআর টিকা দেওয়া উচিত।
মাম্পস কীভাবে প্রতিরোধ করবেন

অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

  • হাত সাবান দিয়ে ধোয়া
  • হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢাকা
  • সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ এড়ানো
  • ব্যবহৃত টিস্যু দ্রুত ফেলে দেওয়া
  • খাবার ও পানীয় ভাগ করে না নেওয়া
  • নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা

কিছু কমন প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্ন: মাম্পস কি?

উত্তর: মাম্পস হলো একটি সংক্রামক রোগ যা লালাগ্রন্থিকে আক্রান্ত করে।

এই রোগটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে বড়দেরও হতে পারে।

প্রশ্ন: মাম্পস কীভাবে ছড়ায়?

উত্তর: মাম্পস ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মাম্পস হয়।

এই ভাইরাসটি হাঁচি, কাশি, বা সংক্রামিত ব্যক্তির লালার সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়।

প্রশ্ন: মাম্পসের চিকিৎসা কি?

উত্তর: মাম্পসের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।

চিকিৎসার লক্ষ্য হল লক্ষণগুলি উপশম করা এবং জটিলতা রোধ করা।

প্রশ্ন: মাম্পস প্রতিরোধ করা কি সম্ভব?

উত্তর: হ্যাঁ, মাম্পস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এমএমআর (Measles, Mumps, and Rubella) টিকা মাম্পস প্রতিরোধে ৯৭% কার্যকর।